Tuesday, September 27, 2016

ডেইরী এবং ফ্যাটেনিং নিয়ে প্রশ্ন-উত্তর



প্রশ্ন ০১: আমি বিদেশে থাকি। কিছু টাকা জমিয়েছি, দেশে এসে ফার্ম করতে চাই। ফার্ম করে কি সংসার খরচ চালাতে পারবো?
উত্তর: ধরে নিলাম আপনি ৩০ লাখ টাকা জমিয়েছেন। প্রথেমেই বলবো, না আপনি পারবেন না সংসার খরচ চালাতে। কারন আমি চাইনা আপনি এই টাকার পুরোটা এই খাতে বিনিয়োগ করেন এখন। দেশে আসার আগেই আপনি ছোট করে ৫ লাখ টাকা দিয়ে শুরু করতে পারেন। দেশে আপনার পরিবারের পক্ষ থেকে যদি কেউ থাকে তারা দেখাশুনা করবে। এই ক্ষেত্রে খুব কম খরচে একটা গোয়াল ঘর সাথে ২ টা ১২-১৪ লিটার দুধের গরু বাছুর সহ এবং ৩-৪ টা ছোট দেশী ষাড় বাছুর কিনতে পারেন। ঘাস চাষ অবশ্যই করতে হবে খরচ কমিয়ে আনার জন্য। দুধের গরুগুলো ৭-৮ মাস দুধ দেবে, এটা দিয়ে সব গরুর খাবার খরচ, এবং ১ জন কর্মচারীর বেতন হয়ে গিয়ে যা থাকবে তা জমিয়ে রাখবেন। ডেইরী ব্যবসা লাভবান তখনই হবে যদি আপনার গরুগুলো প্রতি বছর বাচ্চা দেয় এবং খরচ কমিয়ে আনতে পারেন। এটাই মূল মন্ত্র। আপনার গরু ২ টি দুধ দেয়া বন্ধ করে দিলে ৪-৫ মাস ড্রাই সময়টা জমানো টাকা খরচ করবেন বা ১-২ টা ষাড় বিক্রি করে দিলেন, পাশাপাশি দানাদার খাবার কমিয়ে ঘাস খর খাইয়ে খরচ কমানোর চেস্টা করবেন।এই সময়টা চালিয়ে নিয়ে যাওয়াটাই কঠিন। ৪-৫ মাস পরে আবার বাচ্চা দিলে আবার দুধ বিক্রি করে আগের অবস্থায় চলে আসতে পারবেন।
এই ক্ষেত্রে ষাড় বাছুর গুলো না কিনে আপনি শুধু মাত্র ২ টা দুধের গরু দিয়েও শুরু করতে পারেন। এগুলোর দুধ দেয়া বন্ধ হয়ে গেলে আবার ২ টা কিনবেন। এভাবে একটা সাইকেল করে নিলে দুধের টাকা দিয়েই খাবার খরচ মিটিয়ে হয়তো কিছু টাকা হাতে থাকতে পারে। দুধের দাম কত, কোথায় কিভাবে বিক্রি করবেন তা আগে থেকে জেনে বুঝে ডেইরী শুরু করবেন।
এভাবে কমপক্ষে ৩-৪ বছর যাবার পর একটা ভাল অবস্থানে যখন চলে আসবে, তখনই আপনি দেশে চলে আসতে পারবেন।পয়সা যেহেতু খরচ করে গিয়েছেনই, টাকাটা তো তুলতে হবে। এই ব্যবসা না বুঝে আগেই দেশে চলে আসবেন না প্লিজ। তবে যে টাকা খরচ করে মানুষ বিদেশ যায়, সেই টাকা দিয়ে দেশে অনেক বেশী ভালো কিছু করা যেতো।
প্রশ্ন ০২: আমি কি ডেইরী শুরু করবো নাকি ফ্যাটেনিং?
উত্তর: কোনটা শুরু করবেন তা নির্ভর করবে আপনার আর্থিক, পারিপার্শ্বিক এবং অবস্থানগত সুযোগ সুবিধার কথা বিবেচনা করে। আপনার এরিয়াতে যদি দুধের দাম ভালো থাকে, আপনি যদি ভালো দুধের গরু জোগাড় করতে পারেন, ডাক্তার বা পশু হাসপাতাল কাছেই থাকে আপনি ডেইরী করতে পারেন। তবে ফার্ম শুরু করা যতনা কঠিন তার থেকে বেশী কঠিন এর ব্যবস্থাপনা কৌশল। ফ্যটেনিং এর ক্ষেত্রে যদি শুধু কোরবানীকে লক্ষ্য রেখে আগান তাহলেও ঝুঁকি আছে। কারন কোরাবানীর বাজার নিয়ন্ত্রন করে ভারতের গরুর যোগান। আপনি আমি এই ঈদের বাজারে গরুর দাম কোনভাবেই নির্ধারন করতে পারবোনা। তাই যদি ১২ মাস ধরে বিক্রি চালিয়ে যেতে পারেন ফ্যাটেনিং এ ঝুঁকি অনেক কমে যাবে।
 প্রশ্ন ০৩: ডেইরী ফার্মের সফলতার মূল দিক কি কি?
উত্তর: ৪ টা দিক সব থেকে গুরুত্তপূর্ন: ১) গরুকে প্রতি বছর বাচ্চা দিতে হবে। ২) ফার্মের খাবার খরচ কমিয়ে আনতে হবে ৩) নিজের উপস্থিতি ৪) সঠিক ব্যবস্থাপনা
গরু যদি ৫ লিটার দুধও দেয়, কিন্তু প্রতি বছর বাচ্চা দেয় তাহলে ফার্ম লাভবান হবে। পাশাপাশি খরচের লাগাম কঠিনভাবে ধরে রাখতে হবে। এজন্য ঘাস চাষ করতে হবে, সাইলেজ করতে হবে। আর নিজের উপস্থিতি, এর কোন বিকল্প নেই।
 প্রশ্ন ০৪: গরু হিটে আসার পর কয়েকবার সিমেন বা বীজ দেয়া হয়েছে, বীজ রাখছেনা!! কি করা যায়?
উত্তর: হয়তো যে এ আই কর্মী সিমেন পুশ করছে তিনি এক্সপার্ট নয়, হয়তো যে সিমেন যে টেম্পারেচার এ রাখার কথা তা রাখা হয়নি, নস্ট হয়ে গেছে, অথবা আপনি সঠিক তথ্য দিতে পারেননি এ আই কর্মীকে। এই রকম নানাবিধ সমস্যায় পড়ে এভাবে বার বার সময় নস্ট না করে ভাল জাতের ষাড় দিয়ে পাল দিতে হবে। ফার্মে একটা ভালো জাতের ফ্রিজিয়ান বা শাহীওয়াল ষাড় রাখা এজন্যই খুব জরুরী। গরু প্রতি বছর বাচ্চা না দিলে ফার্ম লোকসান হবেই। অত্যন্ত জরুরী এটা।
প্রশ্ন ০৫: ডেইরী এবং ফ্যাটেনিং এর জন্য কোন জাতের গরু ভালো হবে?
উত্তর: ডেইরীর জন্য আমি ফ্রিজিয়ান জাতকে পছন্দ করি। আমাদের দেশে এই জাতটার রেকর্ড ভালো, যদিও ইনব্রিড হতে হতে প্রায় ধংসের পথে। এই মন্দের মধ্যে এটাই ভালো। ফ্যাটেনিং এর জন্য ফ্রিজিয়ান(F), শাহীওয়াল (S) অথবা এই ২ টার ক্রস SxF থেকে যে ষাড় বাচ্চাটা আসে এটাও অসাধারন। আমার মতে SxF এর ষাড়, আমেরিকান ব্রাহমা থেকে কোন অংশে কম নয়। আর এই ক্রস থেকে যে বকনা বা মেয়ে বাচ্চা হবে তাও দুধের জন্য খারাপ হবেনা। এছাড়া আমাদের দেশের নিজস্ব জাত পাবনা ব্রিড এবং রেড চিটাগং ও বেশ ভালো।
প্রশ্ন ০৬: আমার এলাকায় ঘাস নাই। কি করে খরচ কমাবো?
উত্তর: যাদের এলাকায় ঘাস নেই তারা হাইড্রোফনিক করতে পারেন। নেটে অনেক ভিডিও আছে, অনেকের লেখা আছে ফেসবুকে কিভাবে করতে হয় শিখে নেবেন। খুব সহজ। আর যাদের ৩- ৬ মাস পানি থাকে জমিতে এজন্য ঘাস করতে পারেন না তারা সাইলেজ করতে পারেন এই খারাপ সময়কে ব্যাক আপ দেবার জন্য। সাইলেজ কি করে করবেন আমার ফেসবুকে লেখা আছে। আগে অল্প করে দেখেন কেমন হয়।
প্রশ্ন ০৭: দেশী গরুকে বিদেশী সিমেন দিলে কি ভালো ফল পাওয়া যাবে?
উত্তর: দেশী গরুকে ৫০-৭৫% এর সিমেন দিতে পারেন। এতে খুব ভালো বাচ্চা আসবে, দুধ ও অনেক ভালো আসবে। এরপর যে বাচ্চা আসবে ওটাকে আবার ৭৫% সিমেন দিবেন। এভাবে জাত উন্নয়ন করে নিলে আপনি সব থেকে ভালো দুধের গরু পাবেন। কিন্তু সমস্যা হলো আমাদের দেশী গরু কি এখন পাওয়া যায়!!! এটা সংরক্ষন করাই এখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ ।
প্রশ্ন ০৮: আমি চাকুরী করছি ঢাকায়। আমার অনেকদিনের শখ একটা ফার্ম করার। আমি কিভাবে আগাবো?
উত্তর: যদি নিজের কাছের লোক থাকে যারা আপনাকে ঠকাবেনা, মিথ্যা বলবেনা তাহলে শুরু করতে পারেন ছোট পরিসরে নিজের বাড়ীতে। এখান থেকে আয় করে আপনি চলবেন এভাবে চিন্তা না করাই ভালো প্রথম অবস্থায়। ধরেই নেবেন ৩ বছর কিছু আসবেনা। শুধু সম্পদ বাড়বে। কৌশলগত ভাবে আগালে ৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করলে এখনই কিছু মুনাফা আসবে (প্রশ্ন ০১ দেখেন)। আর মোটামুটি ৩৪-৪০ লাখ টাকা হাতে নিয়ে নামলে প্রথম থেকেই বেশ ভাল লাভ বা মুনাফা করতে পারবেন। সবকিছু কৌশলগত ব্যাপার। সকল সমস্যা ছোট ব্যবসায়ীদের যাদের মুলধন কম, তাই অপেক্ষা তাদের একটু বেশী করতে হবে।
প্রশ্ন ০৯: ভালো দুধের গরু কোথায় পাবো? সবাই ঠকায়, বলে একটা দুধ হয় আরেকটা। কি করে ভালো দুধের গরু চিনতে পারবো?
উত্তর: হ্যা, অনেকেই মিথ্যা বলে ঠকিয়ে দিচ্ছে। আমার পরামর্শ, গরু না চিনলে গাভীন গরু প্রথম অবস্থায় কিনবেন না। নানা ভাবে আপনাকে বিক্রেতা বুঝাবে। আপনি তখনই কিনবেন যখন গরু দেখলেই বুঝে যাবেন কেমন হতে পারে। এই গাভীন গরু কেনা জুয়া খেলার মত অবস্থা। দুধের গরু কেনাতেও অনেক ধোকাবাজী আছে। দুধের গরু কেনার আগের দিন বিকাল বেলা দুধ দোয়ানোর সময় সামনে থেকে দেখবেন কতটুকু দুধ পেলেন। পরেরদিন সকাল বেলা যাবেন আবার দুধ দোয়াতে। এভাবে প্রথম বিকাল পরে সকাল….. ঠিক এই নিয়মে গিয়ে দুধ চেক করে দেখলে আপনাকে ঠকাতে পারবে না। আপনি যদি আগে সকালে এরপর বিকালে যান….. তাহলেই ধরা খাবেন। কি করে শুনুন। যেদিন সকালে যাবেন তা যদি আগের দিন বিক্রেতা জানে সে আগেরদিন বিকালে দুধ কম দোয়াবে আপনাকে পরেরদিন বেশী দুধ দেখানোর জন্য। আপনি তো সকাল বেলা গিয়ে দেখবেন দুধ পেয়েছি সকালেই ১৮ কেজি, বিকালে ৬ কেজি। এরপর আপনি ২.৫০ লাখ টাকা দিয়ে কিনে আনবেন। বাসায় এসে দেখবেন সকালে হচ্ছে ১১ কেজি এবং বিকালে ৬ কেজি। মানে ঠকে গেছেন আপনি, প্রায় ৮০ হাজার টাকা বেশী দিয়ে গরু কিনে এনেছেন। আশাকরি বোঝাতে পেরেছি।

দেশি (ব্ল্যাক বেঙ্গল) ছাগল খামার

দেশি (ব্ল্যাক বেঙ্গল) ছাগল খামার স্থাপনে উন্নত গুলাগুরসম্পন্ন ছাগল নির্বাচন কৌশল
ভূমিকা: লাভজনক বৱ্যাক বেঙ্গল ছাগলের খামার স্থাপনে উৎপাদন বৈশিষ্ট্য উনড়বত গুনাগুনসম্পনড়ব ছাগী ও পাঁঠা সংগ্রহ একটি মূল দায়িত্ব হিসেবে বিবেচিত। মাঠ পর্যায়ে বিভিনড়ব বয়সী ছাগী ও পাঁঠা নির্বাচন সফলভাবে পালনের জন্য প্রযুক্তিগত তথ্যাদি সরবরাহ অত্যাবশ্যক।
প্রযুক্তির বৈশিষ্ট্য/সংক্ষিপ্ত বিবরণ
বাংলাদেশে বর্তমানে বাণিজ্যিক ছাগল প্রজনন খামার না থাকায় মাঠ পর্যায় হতে ছাগল সংগ্রহ করতে হবে। মাঠ পর্যায়ে ব্যাক বেঙ্গল ছাগল, বাচ্চা ও দুধ উৎপাদন ক্ষমতার ভিনড়বতা বিদ্যমান। উক্ত ভিনড়বতা বংশ অথবা/এবং পরিবেশগত কারণ বা স্বতন্ত্র উৎপাদন দক্ষতার জন্য হতে পারে। সে প্রেক্ষাপটে ব্যাক বেঙ্গল ছাগল খামার প্রতিষ্ঠার জন্য বংশ বিবরণের ভিত্তিতে বাছাই ও নিজস্ব উৎপাদন/পূনরুৎপাদন বৈশিষ্ট্যাবলীর ভিত্তিতে বাছাই বিবেচনায় রেখে ছাগল নির্বাচন করা যেতে পারে।
বংশ বিবরণের ভিত্তিতে বাছাই
মাঠ পর্যায়ে বংশ বিবরণ পাওয়া দুরূহ। কারণ খামারীরা ছাগলের বংশ বিবরণ লিখিত আকারে সংরক্ষণ করেন না। তবে তাঁদেও সাথে আলোচনা করে একটি ছাগী বা পাঁঠার বংশের উৎপাদন ও পূনরুৎপাদন দক্ষতা সম্বন্ধে ধারনা নেয়া যেতে পারে। ছাগীর মা/দাদী/নানীর প্রতিবারে বাচ্চার সংখ্যা, দৈনিক দুধ উৎপাদন, বয়োপ্রাপ্তির বয়স, বাচ্চার জন্মের ওজন ইত্যাদি সংগ্রহ করা সম্ভব। পাঁঠা নির্বাচনের ক্ষেত্রে পাঁঠার মা/দাদী/নানীর তথ্যাবলীর উপর নির্ভর করা যেতে পারে। একটি উনড়বত বৱ্যাক বেঙ্গল ছাগী/পাঁঠার বংশীয় গুনাগুন নিমড়বরূপ হওয়া প্রয়োজন
নিজস্ব উৎপাদন/পূনরুৎপাদন বৈশিষ্ট্যাবলীর ভিত্তিতে বাছাই
এ ক্ষেত্রে দু’টি বিষয় বিবেচনা করা প্রয়োজন। ছাগী ও পাঁঠার উৎপাদন এবং পূনরুৎপাদন বৈশিষ্ট্যাবলী এবং এদের দৈহিক
বৈশিষ্ট্যাবলী। পাঁঠা নির্বাচনের ক্ষেত্রে উৎপাদন এবং পূনরুৎপাদন বৈশিষ্ট্যাবলী তার
মা/দাদী/নানীর গুনাগুনের উপর নির্ভর করবে। তবে পাঁঠার দৈহিক বৈশিষ্ট্যাবলীর বিবেচনায় নির্বাচন করা যেতে পারে। ছাগী নির্বাচনে উৎপাদন ও পূনরুৎপাদন বৈশিষ্ট্যাবলী নিমড়বরূপ হবে।
সারণী ১ঃ ছাগীর উৎপাদন/ পূনরুৎপাদন বৈশিষ্ট্যাবলী
উৎপাদন ও পূনরুৎপাদন গুনাগুন
ঘন ঘন বাচ্চা দেওয়ার ক্ষমতা ঃ বছরে কমপক্ষে ২ বার এবং প্রতিবার কমপক্ষে ২টি বাচ্চা
ন্যূনতম দৈনিক দুধ উৎপাদন ঃ ৬০০ মি.লি
প্রতিটি বাচ্চার জন্ম ওজন ঃ >১ কেজি
বয়োঃপ্রাপ্তির বয়স ঃ ৪.৫ - ৫ মাস
বয়োঃপ্রাপ্তির ওজন ঃ >১০ কেজি
দুগ্ধ প্রদানকাল ঃ ৩ মাস
ছাগী নির্বাচন
লাভজনক বৱ্যাক বেঙ্গল ছাগল খামার প্রতিষ্ঠার জন্য সারণী-১ এ উলেখিত জাতের ছাগী নির্বাচনের ক্ষেত্রে দৈহিক যে সমস-
গুনাবলী বিবেচনা প্রয়োজন তা নিমড়বরূপ। বিভিনড়ব বয়সে দৈহিক বৈশিষ্ট্যের তারতম্য হয়। সে কারণে একটি ছাগীর ৬-১২ মাস, ১২-২৪ মাস এবং ২৪ মাসের উর্দ্ধে বয়সের দৈহিক বৈশিষ্ট্যাবলী ভিনড়বভাবে তুলে ধরা হল।
উনড়বত গুনাগুন সম্বলিত একটি ছাগীর নিমড়বলিখিত বৈশিষ্ট্যাবলী থাকা প্রয়োজন
মাথা ঃ চওড়া ও ছোট হবে
দৈহিক গঠন ঃ শরীর কৌনিক এবং অপ্রয়োজনীয় পেশীমুক্ত হবে
বুক ও পেট ঃ বুকের ও পেটের বেড় গভীর হবে
পাজরের হাড় ঃ পাজরের হাড় চওড়া এবং দুইটি হাড়ের মাঝখানে কমপক্ষে এক আঙ্গুল ফাঁকা জায়গা থাকবে
ওলান ঃ ওলানের দৈর্ঘ্য এবং প্রস' সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকবে। বাঁটগুলো হবে আঙ্গুলের মত একই আকারের এবং
সমান-রালভাবে সাজানো। দুধের শিরা উলেৱখযোগ্যভাবে দেখা যাবে
বাহ্যিক অবয়ব ঃ আকর্ষণীয় চেহারা, ছাগী সুলভ আকৃতি, সামঞ্জস্যপূর্ণ ও নিখুঁত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ
পাঁঠা নির্বাচন
লাভজনক বৱ্যাক বেঙ্গল ছাগল খামার প্রতিষ্ঠার জন্য উলেৱখিত জাতের পাঁঠা নির্বাচনের ক্ষেত্রে দৈহিক যে সমস- গুনাবলী বিবেচনাপ্রয়োজন তা নিমড়বরূপ। বিভিনড়ব বয়সে দৈহিক বৈশিষ্ট্যের তারতম্য হয়।
উনড়বত গুনাগুন সম্বলিত একটি পাঁঠার নিমড়বলিখিত বৈশিষ্ট্যাবলী থাকা প্রয়োজন
চোখ : পরিষ্কার, বড় ও তীক্ষ্ণ দৃষ্টি সম্পনড়ব হবে
ঘাড় : খাটো ও মোটা থাকবে
বুক : গভীর ও প্রশস- হবে
পিঠ : প্রশস- হবে
লয়েন : প্রশস- ও পুরু এবং রাম্প এর উপরিভাগ সমতল ও লম্বা থাকবে
পা : সোজা, খাটো এবং মোটা হবে। বিশেষ করে পিছনের পাদ্বয় সুঠাম ও শক্তিশালী হবে এবং একটি হতে অন্যটি বেশ
পৃক থাকবে
অন্ডকোষ : শরীরের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে ঝুলানো থাকবে
বয়স : অধিক বয়স্ক (২ বছর বয়সের বেশী) পাঁঠা নির্বাচন করা যাবে না
ব্যবহারের সম্ভাবনা
সব ঋতুতে এবং সমগ্র বাংলাদেশে ব্যবহার উপযোগী।
প্রযুক্তি ব্যবহারের সতকর্তা/বিশেষ পরামর্শ
শুধুমাত্র উপরোলেখিত বৈশিষ্ট্যাবলীর উপর ভিত্তি করে ছাগী এবং পাঁঠা নির্বাচন করলে একটি খামার লাভবান হবে না। বরং
উনড়বত ছাগল নির্বাচনসহ খাদ্য ব্যবস্থাপনা এবং সর্বোপরি সুষ্ঠু খামার ব্যবস্থাপনা করা হলে লাভজনক খামার প্রতিষ্ঠা সম্ভব।
সূত্র : কৃষি তথ্য সার্ভিস

ষ্টল ফিডিং পদ্ধতিতে ছাগল পালন এবং বাণিজ্যিক সম্ভাবনা

বাংলাদেশে ছাগল পালনের ক্ষেত্রে সাধারণত ছাগলকে ছেড়ে বা মাঠে বেঁধে খাওয়ানো হয়। গবেষণার মাধ্যমে উদ্ভাবিত বিজ্ঞানভিত্তিক বাসস্থান, খাদ্য ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা অনুসারে ছাগল পালনের প্যাকেজ প্রযুক্তিকে স্টল ফিডিং পদ্ধতি বলা হয়।
স্টল ফিডিং পদ্ধতির করণীয়ঃ
ছাগল নির্বাচনঃ এ পদ্ধতিতে ছাগল খামার করার উদ্দেশ্যে ৬-১৫ মাস বয়সী স্বাভাবিক ও রোগমুক্ত ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের পাঁঠা/ছাগী সংগ্রহ করতে হবে। পাঁঠার বয়স ৫-৭ মাস হতে পারে।
ছাগলের ঘরঃ স্টল ফিডিং পদ্ধতিতে প্রতিটি বয়স্ক ছাগলের জন্য প্রায় ১০ বর্গফুট ঘরের জায়গা প্রয়োজন। ঘরটি বাঁশ, কাঠ বা ইটের তৈরী হতে পারে। শীতের রাতে ঘরের বেড়া চট দিয়ে ঢেকে দিতে হবে এবং মেঝেতে খড় বিছিয়ে দিতে হবে।
ছাগলকে ঘরে থাকতে অভ্যস্ত করানোঃ ছাগল সংগ্রহের সাথে সাথেই সম্পূর্ণ আবদ্ধ অবস্থায় রাখা উচিত নয়। প্রথমে ছাগলকে দিনে ৬-৮ ঘন্টা চরিয়ে বাকী সময় আবদ্ধ অবস্থায় রেখে পর্যাপ্ত খাদ্য (ঘাস ও দানাদার খাদ্য) সরবরাহ করতে হবে। এভাবে ১-২ সপ্তাহের মধ্যে চরানোর সময় পর্যায়ক্রমে কমিয়ে সম্পূর্ণ আবদ্ধ অবস্থায় রাখতে হবে। তবে বাচ্চা বয়স থেকে আবদ্ধ অবস্থায় রাখলে এ ধরনের অভ্যস্ততার প্রয়োজন নেই।
বাচ্চার পরিচর্যাঃ জন্মের পরপরই বাচ্চাকে পরিষ্কার করে শাল দুধ খাওয়াতে হবে। এক মাস পর্যন্ত বাচ্চাকে দিনে ১০-১২ বার দুধ খাওয়াতে হবে। বাচ্চার চাহিদার তুলনায় কম দুধ থাকলে প্রয়োজনে অন্য ছাগী থেকে দুধ খাওয়াতে হবে। তাছাড়া দুধ না পাওয়া গেলে বাচ্চাকে মিল্ক রিপেৱসার খাওয়াতে হবে। দুধ খাওয়ানোর আগে ফিডার, নিপলসহ আনুসাংগিক জিনিসপত্র পানিতে ফুটিয়ে জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে। ১-১.৫ কেজি ওজনের একটি ছাগল ছানার দৈনিক ২৫০-৩৫০ গ্রাম দুধ প্রয়োজন। ওজন বৃদ্ধিও সাথে সাথে দুধের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে। বাচ্চার বয়স ৬০-৯০ দিন হলে দুধ ছেড়ে দেবে। সাধারণত ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগীকে প্রয়োজনমত খাওয়ালে বাচ্চার প্রয়োজনীয় দুধ পাওয়া যায়। বাচ্চার ১ মাস বয়স থেকেই ধীরে ধীরে কাঁচা ঘাস এবং দানাদার খাদ্যে অভ্যস্ত করতে হবে।
স্টল ফিডিং পদ্ধতিতে ছাগলকে খাওয়ানোঃ ছাগল সাধারণতঃ তার ওজনের ৪-৫% হারে খেয়ে থাকে। এর মধ্যে ৬০-৮০% আঁশ জাতীয় খাবার (ঘাস, লতা, পাতা, খড় ইত্যাদি) এবং ২০-৪০% দানাদার খাবার (কুড়া, ভূষি, চাল, ডাল ইত্যাদি) দিতে হবে। একটি বাড়ন্ত- খাসীকে দৈনিক ১-১.৫ কেজি কাঁচা ঘাস এবং ২০০-২৫০ গ্রাম দানাদার খাবার (সারণী-১) দিতে হবে। দুই থেকে তিন বাচ্চা বিশিষ্ট ২৫ কেজি ওজনের ছাগীর দৈনিক প্রায় ১.৫-২.৫ কেজি কাঁচা ঘাস এবং ৩৫০-৪৫০ গ্রাম দানাদার খাদ্য প্রয়োজন হয়। একটি প্রাপ্ত বয়স্ক পাঁঠার দৈনিক ১.৫-২.৫ কেজি কাঁচা ঘাস এবং ২০০-৩০০ গ্রাম দানাদার খাদ্য প্রয়োজন।
সারণী-১: ছাগলের দানাদার খাদ্যের সাধারণ মিশ্রন (%)
খাদ্য উপাদান শতকরা হার (%)
চাল/গম/ভুট্টা ভাঙ্গা ১২.০০
গমের ভূষি/আটা/কুঁড়া ৪৭.০০
খেসারী/মাসকালাই/অন্য ডালের ভূষি ১৬.০০
সয়াবিন/তিল/নারিকেল/সরিষা/খৈল ২০.০০
শুটকি মাছের গুড়া ১.৫০
ডাই-ক্যালসিয়াম ফসফেট ২.০০
লবণ ১.০০
ভিটামিন মিনারেল প্রিমিক্স ০.৫০
বিপাকীয় শক্তি (মেগাজুল/কেজি) ১০.০০
বিপাকীয় প্রোটিন (গ্রাম/কেজি) ৬২.০০
ছাগলের জন্য ঘাস চাষঃ ঘাস সরবরাহের জন্য বিভিন্ন জাতের দেশী ঘাস খাওয়ানো যায়। ইপিল ইপিল, কাঁঠাল পাতা, খেসারী, মাসকালাই, দুর্বা, বাকসা ইত্যাদি দেশী ঘাসগুলো বেশ পুষ্টিকর। এছাড়া উচ্চ ফলনশীল নেপিয়ার, স্পেনডিডা, এন্ড্রোপোগন, পিকাটুলুম ইত্যাদি ঘাস আবাদ করা যেতে পারে।
ছাগলকে খড় খাওয়ানোঃ ঘাস না পাওয়া গেলে খড়কে ১.৫-২.০ ইঞ্চি (আঙুলের দুই কর) পরিমানে কেটে নিমেড়ব বর্ণিত পদ্ধতিতে পক্রিয়াজাত করে খাওয়ানো যেতে পারে। এজন্য ১ কেজি খড়ের সাথে ২০০ গ্রাম চিটাগুড়, ৩০ গ্রাম ইউরিয়া ৬০০ গ্রাম পানির সাথে মিশিয়ে ইউএমএস তৈরী করে খাওয়ানো যেতে পারে। এর সাথে এ্যালজি উৎপাদন করে দৈনিক ১-১.৫ লিটার পরিমানে খাওয়াতে হবে। একটি ছাগল দৈনিক ১.০-২.০ লিটার পানি খায়। এজন্য পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে হবে।
পাঁঠার ব্যবস্থাপনাঃ যেসব পাঁঠা বাচ্চা প্রজনন কাজে ব্যবহার করা হবে না তাদেরকে জন্মের ২-৪ সপ্তাহের মধ্যে খাসী করানো উচিত। পাঁঠাকে যখন প্রজনন কাজে ব্যবহার করা হয় না তখন তাকে পর্যাপ্ত পরিমানে শুধু ঘাস খাওয়ালেই চলে। তবে প্রজনন কাজে ব্যবহারের সময় ওজন ভেদে ঘাসের সাথে ২০০-৫০০ গ্রাম পরিমান দানাদার খাবার দিতে হবে। পাঁঠাকে প্রজননক্ষম রাখার জন্য প্রতিদিন পাঁঠাকে ১০ গ্রাম পরিমাণ গাঁজানো ছোলা দেয়া উচিত। পাঁঠাকে কখনই চর্বিযুক্ত হতে দেয়া যাবে না।
ছাগলের স্বাস্থ্য ও অন্যান্য ব্যবস্থাপনাঃ সব ছাগলকে বছরে দু’বার (বর্ষার শুরু এবং শীতের শুরুতে) কৃমিনাশক খাওয়াতে হবে। ছাগলের মারাত্মক রোগ, যেমনঃ পিপিআর, গোটপক্স হলে অতি দ্রুত নিকটস্থ পশুহাসপাতালে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া ছাগলে তড়কা, হেমোরেজিক সেপ্টিসেমিয়া, এন্টারোটক্সিমিয়া, বিভিনড়ব কারণে পাতলা পায়খানা এবং নিউমোনিয়া হতে পারে। সঠিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা এবং চিকিৎসার মাধ্যমে এ সকল রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে সুস্থ ছাগলের জন্য একথাইমা রোগের ভ্যাকসিন জন্মের ৩য় দিন ১ম ডোজ এবং ২য় ডোজ জন্মের ১৫-২০ দিন পর দিতে হবে, পিপিআর রোগের ভ্যাকসিন ৪ মাস বয়সে এবং গোট পক্সের ভ্যাকসিন ৫ মাস বয়সে দিতে হবে।
জৈব নিরাপত্তাঃ খামারে কোন নতুন ছাগল আনতে হলে অবশ্যই রোগমুক্ত ছাগল সংগ্রহ করতে হবে এবং ১৫ দিন খামার থেকে দূরে অন্যত্র রেখে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। কোন রোগ দেখা না দিলে ১৫ দিন পর পিপিআর ভ্যাকসিন দিয়ে ছাগল খামারে রাখা যাবে। অসুস্থ ছাগল পালের অন্য ছাগল থেকে দ্রুত অন্যত্র সরিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে।
ছাগলের প্রজনন ব্যবস্থাপনাঃ ছাগলের ঘর নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। সকল ছাগলকে বছরে ৫-৬ বার ০.৫% ম্যালাথায়ন দ্রবণে চুবিয়ে চর্মরোগ মুক্ত রাখতে হবে। পাঁঠী ১২-১৩ কেজি ওজন (৭-৮ মাস বয়স) হলে তাকে পাল দেয়া যেতে পারে। পাঁঠী বা ছাগী গরম হওয়ার ১২-১৪ ঘন্টা পর পাল দিতে হয়। অর্থাৎ সকালে গরম হলে বিকেলে এবং বিকেলে হলে পরদিন সকালে পাল দিতে হবে। পাল দেয়ার ১৪২-১৫৮ দিনের মধ্যে সাধারণত বাচ্চা দেয়। পাল দেয়ার জন্য নির্বাচিত পাঁঠা সবসময় নিঃরোগ, ভাল বংশের ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের হতে হবে। ‘‘ইনব্রিডিং’’ এড়ানোর জন্য ছাগীর বাবা বা দাদা বা ছেলে বা নাতীকে দিয়ে প্রজনন করানো যাবে না।
ছাগলের বাজারজাতকরণঃ সুষ্ঠু খাদ্য ও অন্যান্য ব্যবস্থাপনায় ১২-১৫ মাসের মধ্যে খাসি ২০-২২ কেজি ওজনের হয়। এসময় খাসী বিক্রি করা যেতে পারে। অথবা খাসির মাংস প্রক্রিয়াজাত করেও বিক্রি করা যেতে পারে।
তথ্য:
তথ্য আপা প্রকল্প