Wednesday, August 31, 2016

গরু মোটাতাজাকরন

বাংলাদেশে গরুর মাংস খুব জনপ্রিয় এবং চাহিদাও প্রচুর। তাছাড়া মুসলমাদের ধমীয় উৎসব কুরবানীর সময় অনেক গরু জবাই করা হয়। সূতরাং “ গরু মোটাতাজাকরন” পদ্ধতি বাংলাদেশের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ন এবং একটি লাভজনক ব্যবসা।
গরু মোটাতাজাকরন প্রক্রিয়ায় ধারাবহিকভাবে যে সকল বিষয়গুলো সম্পন্ন করতে হব তা নিম্নরুপ।
০১. পশু নির্বাচন, ০২. কৃমিমুক্তকরন ও টিকা প্রদান , ০৩. পুষ্টি ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা এবং ০৪. বাজারজাতকরন।
০১. পশু নির্বাচন : মোটাতাজাকরণ কর্মসূচীর জন্য গরু ক্রয়ের সময় প্রধান দুটি বিবেচ্য বিষয় হলো বয়স ও শারীরিক গঠন।
ক. বয়স নির্ধারন: মোটতাজা করার জন্য সাধারনত ২ থেকে ৫ বছরের গরু ক্রয় করা যেতে পারে, তবে ৩ বছরের গরু হলে ভাল।
খ.
শারীরিক গঠন : মোটাতাজাকরণে ব্যবহৃত গরুর দৈহিক গঠন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এজন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মনে রেখে গরু নির্বাচন করা জরুরী।
• দেহ হবে বর্গাকার ।
• গায়ের চামড়া হবে ঢিলা ( দুই আঙ্গুল দিয়ে ধরে টান দিয়ে দেখতে হবে)। 
• শরীরের হাড়গুলো আনুপাতিকহারে মোটা, মাথাটা চওড়া, ঘাড় চওড়া এবং খাটো।
• পাগুলো খাটো এবং সোজাসুজিভাবে শরীরের সাথে যুক্ত। 
• পিছনের অংশ ও পিঠ চওড়া এবং লোম খাটে ও মিলানো ।
• গরু অপুষ্ট ও দূর্বল কিন্তু রোগা নয়।
০২.
কৃমিমুক্তকরন : পশু ডাক্তারের নির্দেশনা মত কৃমির ঔষধ ব্যবহার করতে হবে।গরু সংগ্রহের পর পরই পালের সব গরুকে একসাথে কৃমিমুক্ত করা উচিত। তবে প্রতি ৭৫ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১ টি করে এনডেক্স বা এন্টিওয়ার্ম টাবলেট ব্যবহার করা যেতে পারে।
০৩. টিকা প্রদান : পূর্ব থেকে টিকা না দেওয়া থাকলে খামারে আনার পরপরই সবগুলো গরুকে তড়কা, বাদলা এবং ক্ষুরা রোগের টিকা দিতে হবে। এ ব্যপারে নিকটস্থ পশু হাসপাতলে যোগাযোগ করতে হবে।
০৪. ঘর তৈরী ও আবসন ব্যবস্থাপনাঃ আমদের দেশের অধিকাংশ খামারী ২/৩ টি পশু মোটাতাজা করে থাকে, যার জন্য সাধারনত আধুনিক সেড করার প্রয়োজন পড়েনা। তবে যে ধরনের ঘরেই গরু রাখা হোক ঘরের মধ্যে পর্যন্ত আলো ও বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা থাকতে হবে। ঘরের মল- মূত্র ও অন্যান্য আবর্জনা যাতে সহজেই পরিস্কার করা যায় সে দিকে খেয়াল রেখে ঘরে তৈরী করতে হবে।
০৫. পুষ্টি ও খাদ্য ব্যবস্থাপনাঃ গরু মোটতাজাকরনে দুই ধরনের খাদ্যের সমন্বয়ে রশদ (রেশন) তৈরী করা হ হয়। 
• আঁশ জাতীয়ঃ শুধু খড়, ইউ এম, সবুজ ঘাস ইত্যাদি । তবে এই প্রক্রিয়ায় খামারীদেরকে শুধু খড়ে পরিবর্তে ইউ এম এস খাওয়াতে হবে।
• দানারারঃ খৈল, ভূষি, চাষের কুড়া , খুদ, শুটকি মাছ, ঝিনুকের গুড়া, লবন ইত্যাদি।
খাওয়ানের পরিমানঃ গরুকে তার ইচ্ছা অনুযায়ী, অর্থাৎ গরু যে পরিমান খেতে পারে সে পরিমান ইউ এম এস সরবারাহ করতে হব। 
• 
কোন খামারী সবুজ ঘাস খাওয়াতে চাইলে প্রতি ১০০ কেজি কাঁচা ঘাসের সাথে ৩
কেজি চিটাগুড়ে মিশিয়ে তা গরুতে খাওয়াতে পারেন। এক্ষেত্রে কাঁচা ঘাসেও
গরুকে পর্যাপ্ত পরিমানে সরবরাহ করতে হবে। 
খ . দানাদর মিশ্রণঃ খামারীদের সবিধার জন্য নীচের সারনীতে একটি দানাদার মিশ্রণ তৈরীর বিভিন্ন
উপাদান পরিমান সহ উল্লেখ করা হল। নিম্নের ছক অনুযায়ী অথবা প্রয়োজন
অনুযায়ী খামারীগণ বিভিন্ন পরিমান মিশ্রণ তৈরী করে নিতে পারবেন। 
• 
খাওয়ানের পরিমানঃ গরুকে তার দেহের ওজন অনুপাতে দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে
হবে। পাশের দানাদার মিশ্রণটি গরুর ওজনের শতকরা ০.৮-১ ভাগ পরিমান সরবরাহ
করলেই চলবে।
• খাওয়ানোর সময়ঃ দানাদার মিশ্রণটি এবারের না খাইয়ে ভাগে ভাগ করে সকালে এবং বিকালে খাওয়াতে হবে।
• পানিঃ গরুকে পর্যান্ত পরিমানে পরিস্কার খামার পানি সরবরাহ করতে হবে।
• 
০৬. দৈহিক ওজন নির্ণয়ঃ মোটাতাজাকরন প্রক্রিয়ায় গরুকে দৈহিক ওজন নির্ণয়
গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কেননা গরুর খাদ্য সরবরাহ,ঔষধ সরবরাহ ইত্যাদি কাজগুলো
করতে হয় দৈহিক ওজনের ভিত্তিতে।
গরুর ওজন নির্নয়ের জন্য গরুকে সমান্তরাল
জায়গায় দাড় করাতে হবে এবং ছবির নির্দেশিকা মোতাবেক ফিতা দ্বারা দৈর্ঘ্য ও
বুকের বেড়ের মাপ নিতে হবে। এই মাপ নীচের সূত্রে বসালে গরুর ওজন পাওয়া যাবে।
দৈর্ঘ্য × বুকের বেড় (ফুট) × বুকের বেড় (ফুট) 
....................................... = ওজন (কিলোগ্রাম) ৬.৬০
উপসাংহারঃ উপরে বর্নিত পদ্বতি অনুযায়ী পালন করলে ৯০ থেকে ১২০ দিনের মধ্যেই গরু মোটাতাজাকরন করে বাজারজাত করা সম্ভব।
সূত্র : কৃষি তথ্য সার্ভিস

Tuesday, August 16, 2016

গাভীর খামার ব্যবস্থাপনা (হিসাব-নিকাশ)



বাংলাদেশে প্রতিবছর দুধের চাহিদা ১২.৫২ মিলিয়ন মেট্রিক টন, উৎপাদন হচ্ছে প্রতিবছর ২.২৮ মিলিয়ন মেট্রিক টন, ঘাটতি প্রতিবছর ১০.২৪ মিলিয়ন মেট্রিক টন। চাহিদার আলোকে আমাদের দেশে ছোট-বড় প্রায় ৪৭,৭১০টি ডেইরি খামার গড়ে উঠেছে। বর্তমানে শংকর জাতের গাভী পালনের মাধ্যমে দুগ্ধ খামার স্থাপন একটি লাভজনক ব্যবসা। ফলে গাভী পালনে উন্নত ব্যবস্থাপনা, সঠিক প্রজনন, সুষম খাদ্য, রোগদমন ও প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে খামারিদের জানা প্রয়োজন।
ভালজাতের গাভীর বৈশিষ্ট্য
– মাথা : হালকা ও ছোট আকার, কপাল প্রশসত্দ, উজ্জ্বল চোখ, খাদ্যের প্রতি আগ্রহ। দৈহিক বৈশিষ্ট্য : দেহের সামনে দিক হালকা, পিছনের দিক ভারী ও সুসংগঠিত, দৈহিক আকার আকর্ষণীয়, শরীরের গঠন ঢিলা। পাজর : পাজরের হাড় স্পষ্ট, হাড়ের গঠন সামঞ্জস্যপুর্ণ। চামড়া : চামড়া পাতলা, চামড়ার নীচে অহেতুক চর্বি জমা থাকবে না, চামড়ার রঙ উজ্জ্বল, লোম মসৃণ ও চকচকে হবে। ওলান : ওলান বড় সুগঠিত ও দেহের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, বাটগুলো একই আকারের হবে। চারবাট সমান দূরত্বে ও সমানত্দরাল হবে। দুগ্ধশিরা : দুগ্ধশিরা মোটা ও স্পষ্ট, তলপেটে নাভীর পাশ দিয়ে দুগ্ধশিরা আঁকাবাঁকাভাবে বিস্তৃত থাকবে।
খামার ব্যবস্থাপনা:
খামার ব্যবস্থাপনা এক প্রকার কৌশল যার মাধ্যমে খামারের সম্পদ, সুযোগ ও সময়ের সমন্বয় ঘটানো যায়। সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনার সুফল হল-
১. সম্পদের মিতব্যয়িতা
২. স্বল্প সময়ে ফললাভ
৩. স্বল্প সময়ে অধিক উৎপাদন
৪. শক্তি ও শ্রমের অপচয় রোধ
৫. উৎপাদনে গুণগতমান ও উৎকর্ষতা লাভ।
সাধারণ ব্যবস্থাপনা:
গাভী তার গুণগতমান উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়ে থাকে। কিন্তু গাভীর বংশানুক্রমিক গুণগতমান যতই ভাল হোক এর ব্যবস্থাপনা সমন্ধে বিশেষ যত্নবান হওয়া প্রয়োজন। দৈনন্দিন পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা রক্ষা, বিজ্ঞান সম্মত বাসস্থান, সুষম খাদ্য সরবরাহ, সঠিক প্রজনন, রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ইত্যাদি উন্নত গাভী পালনের মৌলিক বিষয়।
বাসস্থান:
পারিবারিক পর্যায়ে বা খামার পর্যায়ে গাভী পালন করতে হলে গাভীর জন্য ভাল বাসস্থান প্রয়োজন। গাভীকে বিভিন্ন প্রতিকূল অবস্থা যেমন- ঝড়, বৃষ্টি, অতিরিক্ত ঠাণ্ডা ও গরম এবং অন্যান্য নৈসর্গিক দৈব দুর্বিপাক, পোকামাকড়, চোর, বন্য-জীবজন্তু হতে রক্ষা করার জন্য যথোপযুক্ত বাসস্থান বা গোয়ালঘর প্রয়োজন। আমাদের আবহাওয়ার আলোকে ঘরে প্রচুর আলো বাতাস চলাচলের জন্য ঘরটি উত্তর-দক্ষিণমুখী হওয়া বাঞ্চনীয়। কোন অবস্থাতেই যেন ঘরে স্যাঁতস্যাঁতে অবস্থা যেন না থাকে। এতে ঘরের মেঝেটি ইট বিছানো থাকলে ভাল হয়। ঘরের দুর্গন্ধ ও মশামাছি দমনের জন্য মাঝে মাঝে জীবাণুনাশক দ্বারা ধোয়া প্রয়োজন।
গবাদিপশুর বাসস্থান দুই ধরণের হতে পারে : ১. উন্মুক্ত বা উদাম ঘর ২. বাঁধা ও প্রচলিত ঘর।
বাঁধা ঘরের বৈশিষ্ট্য:
এই পদ্ধতিতে গরুর গলায় দড়ি বা লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে পালন করা যায়। গাভীর খাদ্য, পানি গ্রহণ এবং দুধ দোহন একই স্থানে করা যায়।
সুবিধা :
বাঁধা থাকে বিধায় গাভীর দুধ দোহন সহজ হয়, প্রতিকূল আবহাওয়ায় পশু নিরাপদ থাকে, কৃত্রিম প্রজননের জন্য বেশ সুবিধাজনক, নির্ধারিত অল্প জায়গায় পশু পালন করা যায়।
অসুবিধা:
এই পদ্ধতিতে ঘর তৈরি খরচ বেশি, পশুর সহজে ঘোরাফেরার ব্যবস্থা থাকে না, এতে পশুর ব্যয়াম না হওয়াতে বিভিন্ন ধরনের রোগ হবার সম্ভাবনা থাকে, একই জায়গায় দিনরাত্রি বাঁধা থাকে বলে মেঝে সঁ্যাতসঁ্যাতে থাকে।
বাঁধা ঘরের নকশা:
এই পদ্ধতির গো-শালায় পশু সব সময় বাঁধা অবস্থায় থাকে। এজন্য গো-শালা যাতে সহজে পরিস্কার করা যায় সেদিকে লক্ষ্য রেখে ঘর তৈরি করা প্রয়োজন। প্রচলিত গো-শালা দুই ধরনের হয়-
একসারি বিশিষ্ট গো-শালা:
অল্প সংখ্যক গবাদি পশুর জন্য একটি লম্বা সারিতে বেঁধে পালনের জন্য এই গো-শালা তৈরি করা হয়। প্রতিটি পশুকে পৃথক রাখার জন্য জিআইপাইপ দিয়ে পার্টিশন দেয়া হয়, পার্টিশনের পাইপ লম্বায় ৯০ সে.মি. এবং উচ্চতায় ৪৫ সে.মি. হওয়া প্রয়োজন, একটি গরুর দাঁড়াবার স্থান ১৬৫ সে.মি., পাশের জায়গা ১০৫ সে.মি., খাবার পাত্র ৭৫ সে.মি. এবং নালা ৩০ সে.মি. হওয়া প্রয়োজন, একই মাপে পশুর সংখ্যা অনুযায়ী জায়গা নির্ধারণ করে গো-শালা তৈরি করা হয়, গো-শালা হবে একচালা বিশিষ্ট ঘর, ঘরের ছাদ প্রায় ৩০০ সে.মি. উঁচুতে করতে হয়।
দুই সারি বিশিষ্ট গো-শালা:
অল্প জায়গায় অধিক পশুপালনের জন্য এ ধরণের গো-শালা তৈরি করা হয়, এ ধরনের গো-শালায় পশুকে দুভাবে রাখা যায়, মুখোমুখি পদ্ধতি ও বাহির মুখ পদ্ধতি। মুখোমুখি পদ্ধতিতে দুই সারি পশু সামনাসামনি থাকে। দুইসারি খাবারের পাত্রের মাঝখানে ১২০ সে.মি. চওড়া রাসত্দা থাকে- যা পাত্রে খাবার দেবার জন্য ব্যবহার করা হয়, একটি গরুর জন্য দাঁড়ানোর জায়গা ৫.৫ ফুট, পাশের জায়গা ৩.৫ ফুট।
সুবিধা:
একই সাথে দুইসারি পশুকে সহজে খাবার ও পানি সরবরাহ করা যায়, দুধ দোহনের জন্য অধিকতর আলো পাওয়া যায়, পশু নিজ জায়গায় স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে, পরিচর্যাকারী সহজে চলাফেরা করতে পারে।
একটি গাভীকে নিম্ন তালিকা অনুসারে খাদ্য সরবরাহ করতে হবে :
কাঁচা ঘাস (সবুজ ঘাস) ২০-৩০ কেজি, দানাদার খাদ্য মিশ্রণ: ১৮-২০% প্রোটিন সমৃদ্ধ: ১ম ৩ কেজি দুধ উৎপাদনের জন্য- ০৩ কেজি, পরবর্তী প্রতি কেজি দুধ উৎপাদনের জন্য-০.৫ কেজি, লবণ-৫০-৬০ গ্রাম, পরিস্কার পানি-প্রয়োজন মত।
পরিচর্যা:
গাভীর সঠিক পরিচর্যা না করলে উন্নত জাতের গাভী পালন করেও গাভীকে সুস্থ সবল উৎপাদনক্ষম রাখা সম্ভব হবে না। ফলে গাভী হতে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ দুধ, মাংস পাওয়া যাবে না এবং গাভী পালন অলাভজনক হবে।
দুধ দোহন:
গাভীর দুধ দৈনিক ভোরে একবার এবং বিকালে একবার নির্দিষ্ট সময়ে দোহন করতে হবে। দুধ দোহনের পূর্বে গাভীর উলান ও দোহনকারীর হাত পরিস্কার পানি দিয়ে ভালভাবে ধুয়ে নিতে হবে।
প্রজনন:
গাভীর বংশানুক্রমিক গুণগতমান উন্নয়নের জন্য সুষ্ঠু পরিকল্পিত প্রজনন ব্যবস্থা অবলম্বন করতে হবে। যে ষাড়ের মা, দাদী, নানী যত বেশি পরিমাণ দুধ দেয় তার বাচ্চার দুধ উৎপাদনের ক্ষমতা ততই বেশি হয়। তাই যখন গাভী গরম হবে তখন গুণগতমানসম্পন্ন ষাড়ের বীজ দ্বারা নিকটস্থ কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র হতে গাভীকে প্রজনন করিয়ে নেওয়া প্রয়োজন।
খামারের রেকর্ড সংরক্ষণ:
খামারের লাভক্ষতি নিরূপণ আয়-ব্যয়ের সঠিক হিসাবের উপর নির্ভরশীল। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য পরিকল্পনা ও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিয়য়ে মূল্যায়ন করা দরকার। খামারের উৎপাদিত পণ্যের হিসাব, ক্রয়, বিক্রয়, জন্ম, মৃতু্য এবং কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রমের জন্য সঠিক তথ্য রক্ষাকল্পে রেকর্ড সংরক্ষণ করা অত্যাবশ্যকীয়।
উন্মুক্ত বাসস্থানে নিম্নোক্ত হারে জায়গার প্রয়োজন:
পশুর ধরণ ঘরে প্রতি পশু স্থান প্রতি পশুর জন্য মুক্ত স্থান খাদ্যপাত্র
বাড়ন্ত বাছুর ২.৫-৩ বর্গ মিটার ৫-৬ বর্গ মিটার ৩৭-৫০ সেন্টিমিটার
গাভী ৩-৩.৫ বর্গ মিটার ৮-১০ বর্গ মিটার ৫০-৬০ সেন্টিমিটার
গর্ভবতী গাভী ১০-১২ বর্গ মিটার ১৮-২০ বর্গ মিটার ৬০-৭০ সেন্টিমিটার
গাভী পালন : আয় বাড়তে করণীয়
হয়তো আপনার বাসা সংলগ্ন কিছু জায়গা পতিত অবস্থায় রয়েছে। সেখানে গাভী, হাঁস-মুরগির খামার ও মাছ চাষ করে বাড়তি টাকা উপার্জন করতে পারেন। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করে নিতে পারেন। একদিকে ৮৪ ফুট, আরেক দিকে ৬০ ফুট—এমনি একটি জায়গায় কী কী করবেন, কত পুঁজি নিয়ে নামবেন এবং কবে থেকে লাভবান হতে থাকবেন তার একটি বর্ণনা দেয়া হলো।
সংখ্যা ৮টি। জায়গার পরিমাণ ১৬ ফুট – ৫০ ফুট।
খরচের হিসাব :
১. গাভীর ঘর নির্মাণ (উপরে টিন, চারদিকে দেয়াল) ১০,০০০ টাকা;
২. ৮টি গাভী ক্রয় (বাছুরসহ দুধের গাভী) প্রতিটি ৫০,০০০ করে ৮,০০,০০০ টাকা;
৩. খানার পাত্রসহ আনুষঙ্গিক খরচ ৪,০০০ টাকা;
৪. প্রতিদিন খাদ্য খরচ (১টির জন্য ১০০ টাকা) ৮টির জন্য (৮০০ – ৩০) ২৮,০০০ টাকা (প্রতি মাসে);
৫. ওষুধ, ভিটামিন (মাসিক) ১৫০০ টাকা;
৬. টিউবওয়েল স্থাপন ৮,০০০ টাকা;
৭. পানি সাপ্লাইয়ের মোটর ৮,০০০ টাকা;
৮. ৪টি ফ্যান ১৬,০০০ টাকা; মোট খরচ ৯,৮৫,০০০ টাকা।
গাভীর খামার থেকে আয় :
প্রতিটি গাভী দৈনিক ১৮ কেজি দুধ দেবে। প্রতি কেজির দাম ৩০ টাকা। একটি গাভীর দুধ থেকে প্রতিদিন গড়ে পাওয়া যাবে ৩০ – ১৮ = ৫৪০ টাকা। তাহলে ৮টি গাভীর দুধ থেকে প্রতিদিন ৫৪০ – ৮ = ৪৩২০ টাকা আয় হবে। ফলে ৩০ দিনে ৮টি গাভীর দুধ বিক্রি থেকে ৪৩২০ – ৩০ = ১,২৯,৬০০ টাকা। গাভী প্রায় ৮ মাস ধরে গড়ে ১৮ কেজি দুধ দেবে। এরপর দুধের পরিমাণ কমতে থাকবে। দুধ বিক্রি থেকে ৮ মাসে আয় ১,২৯,৬০০ – ৮ = ১০,৩৬,৮০০ টাকা। প্রাথমিক খরচ ৯,৮৫,০০০ টাকা; মোট আয় = ৫১,৮০০ টাকা। ৮ মাস পর নিট লাভ ৫১,৮০০ টাকা।
৮ মাস পর দুধ দেয়ার পরিমাণ কমে যাবে। গড়ে ৮ কেজিতে নেমে আসবে। তাহলে ৮টি গাভী থেকে ৬৪ কেজি দুধ পাওয়া যাবে। ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করলে ৬৪ কেজি দুধ থেকে দৈনিক আয় ১৯২০ টাকা। ৩০ দিনে আয় ১৯২০ – ৩০ = ৫৭,৬০০। ৮ মাসের আয় ৫৭,৬০০ – ৮ = ৪,৪০,৮০০ টাকা। তাহলে প্রথম ৮ মাসে দুধ বিক্রি থেকে আয় ১০,৩৬,৮০০ টাকা + পরবর্তী ৪ মাসে আয় ৪,৪০,৮০০ টাকা। মোট দুধ বিক্রি থেকে আয় ১৪,৭৭,৬০০ টাকা।
৮ মাস পর দুধ দেয়ার পরিমাণ কমে যাবে। তখন কৃত্রিম প্রজনন দিতে হবে। কৃত্রিম প্রজনন দেয়ার প্রায় ৮ মাস পর গাভী বাচ্চা দেবে। এরপর প্রতিবার ২০ কেজি করে দুধ দেবে। এ গাভী ৪ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত পোষা যাবে। ১ বছর পর এক-একটি বাছুর প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করা যাবে। ৩ বছর পর বাছুরগুলো আবার গর্ভবতী হবে। তখন এক-একটির দাম ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় দাঁড়াবে। এ কারণে বাছুরগুলো রেখে ষাঁড়গুলো বিক্রি করে দিতে হবে।
গাভীকে দানাদার খাদ্য, কাঁচা ঘাস, খড়, চালের কুঁড়া ও প্রচুর পরিমাণে পানি দিতে হবে। পরবর্তী বছরগুলোতে ঘর নির্মাণ খরচ লাগবে না, গাভীও কিনতে হবে না। ৮ মাস পর আবার গাভীগুলো দুধ দেবে। আগের বাছুর বড় হবে। এসময় ঘর নির্মাণ খরচ, গাভী ক্রয় খরচ, টিউবওয়েল নির্মাণ খরচ আর লাগবে না, তবে খাদ্য খরচ বেড়ে যাবে। আগের ৮টি গাভী, ৮টি বড় বাছুর, নতুন ৮টি ছোট বাছুর সব মিলে ২৪টি গরু হবে। আগের বাছুরের মধ্যে যদি ষাঁড় থাকে তাহলে বিক্রি করে দিতে হবে। ৮টি বাছুরের মধ্যে যদি ৫টি ষাঁড় থাকে তাহলে প্রতিটি ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করলে ১৫,০০০ – ৪ = ৬০.০০০ টাকা আয় হবে। এর বেশিও আয় হতে পারে।
৮ মাস পর বাছুর প্রসবের পরে খরচ :
খাদ্য খরচ বেড়ে গিয়ে দাঁড়াবে দৈনিক ১,৫০০ টাকা। তাহলে এক মাসে খাদ্য খরচ ১,৫০০ – ৩০ = ৪৫,০০০ (প্রতি মাসে)। বিদ্যুত্, পানি, ওষুধ, ভিটামিন ৫,০০০ টাকা। মোট ব্যয় ৫০,০০০ টাকা।
আয় :
দুধ বিক্রি থেকে এক মাসে আয় ১,২৯,৬০০ টাকা; ১,২৯,৬০০ – ৫০,০০০ = ৭৯,৬০০ টাকা নিট লাভ। এছাড়া প্রতি বছর বাছুর বিক্রি থেকে এবং গোবর বিক্রি করেও টাকা অর্জন করা যাবে। গাভীগুলো ৪ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত দুধ দেয়ার পর এগুলো বিক্রি করে দিতে হবে। এ ধরনের একটি গাভী ৩০ হাজার টাকায়

পূর্ণ প্রশিক্ষণ নিয়ে গাভীর খামারের উপর বিনিয়োগ যে কোন খামারের চেয়ে অধিক লাভজনক

বাংলাদেশে প্রতিবছর দুধের চাহিদা ১২·৯২ মিলিয়ন মেট্রিক টনের বেশি, কিন্তু উৎপাদন হচ্ছে প্রতিবছর প্রায় ২·৭৮ মিলিয়ন মেট্রিক টন, ঘাটতি প্রতিবছর ১০ মিলিয়ন মেট্রিক টনেরও বেশি। চাহিদার আলোকে আমাদের দেশে ছোট-বড় প্রায় ৪৭,৭১০টি ডেইরি খামার গড়ে উঠেছে (২০১০-২০১১ এর তথ্যানুযায়ী)।
বর্তমানে শংকর জাতের গাভী পালনের মাধ্যমে দুগ্ধ খামার স্থাপন একটি লাভজনক ব্যবসা। ৮/১০ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করলে প্রতি মাসেই ১ লক্ষ টাকা আয় করা যায় অনায়াসেই। তবে তিনটি জরুরী বিষয় আয়ত্বে আনতে হবে শুরুতেই। এবং এই তিনটির কোন একটি অবশ্যই বাদ থাকতে পারবে না।
১. যুব উন্নয়ন বা যে কোন সরকারী-বেসসরকারী প্রতিষ্ঠান থেকে ৩ মাসের প্রশিক্ষণ গ্রহন করা। এক বার প্রশিক্ষণ গ্রহন করার পর পরিপূর্ণ আয়ত্তে না আসলে পুনরায় প্রশিক্ষণ গ্রহন করা। ২ বার পরিপূর্ণ আয়ত্তে না আসলে ৩য় বার প্রশিক্ষণ গ্রহন করা।
২. যে কোন একটি খামারে কমপক্ষে ৬/৮ মাস জড়িত থেকে বাস্তব অভিজ্ঞতা নেয়া। এক বছর জড়িত থাকতে পারলে আরো ভাল।
৩. অন্য কারো বুদ্ধি বা জ্ঞানের উপর ভরসা না করে প্রথমিক পর্যায়ে মূল বিনিয়োগের পাঁচ ভাগের এক ভাগ বিনিয়োগ করা। এক বছর পর বাকী মূলধন বিনিয়োগ করা। অর্থ্যাৎ কেউ ২০ লক্ষ টাকা মূলধন বাজেট করলে প্রথমে চার লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। এক বছর পর বাকী টাকা বিনিয়োগ করাতে হবে।
(এই তিনটি বিষয় খেয়াল রাখতে পারলে একজন খামারী সব খরচ বাদ দিয়েও প্রতি মাসে তার মোট বিনিয়োগের ১০/১২% লাভ করতে পারবেন। এই তিনটি বিষয় আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে শেয়ার করা)
অর্থ্যাৎ একজন খামারীর গাভী পালনে উন্নত ব্যবস্থাপনা, সঠিক প্রজনন পদ্ধতি, সুষম খাদ্য তৈরী, রোগদমন ও প্রাথমিক চিকিৎসা ইত্যাদি ইত্যাদি বিষয়ের উপর আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। তবে সব কিছুর পূর্বে প্রয়োজন গাভীর খামার ব্যবস্থাপনার উপর পরিপূর্ণ প্রশিক্ষণ, সেই সাথে মাঝারি/বড় আকারের একটি খামারে কমপক্ষে ৬/৮ মাস জড়িত থাকার বাস্তব অভিজ্ঞতা।
ভালজাতের গাভীর বৈশিষ্ট্য-
মাথাঃ হালকা ও ছোট আকার, কপাল প্রশস্ত, উজ্জ্বল চোখ, খাদ্যের প্রতি আগ্রহ।
দৈহিক বৈশিষ্ট্যঃ দেহের সামনে দিক হালকা, পিছনের দিক ভারী ও সুসংগঠিত, দৈহিক আকার আকর্ষণীয়, শরীরের গঠন ঢিলা।
পাজরঃ পাজরের হাড় স্পষ্ট, হাড়ের গঠন সামঞ্জস্যপুর্ণ।
চামড়াঃ চামড়া পাতলা, চামড়ার নীচে অহেতুক চর্বি জমা থাকবে না, চামড়ার রঙ উজ্জ্বল, লোম মসৃণ ও চকচকে হবে।
ওলানঃ ওলান বড় সুগঠিত ও দেহের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, বাটগুলো একই আকারের হবে। চারবাট সমান দূরত্বে ও সমান্তরাল হবে। দুগ্ধশিরাঃ দুগ্ধশিরা মোটা ও স্পষ্ট, তলপেটে নাভীর পাশ দিয়ে দুগ্ধশিরা আঁকাবাঁকাভাবে বিস্তৃত থাকবে।
খামার ব্যবস্থাপনাঃ
খামার ব্যবস্থাপনা এক প্রকার কৌশল যার মাধ্যমে খামারের সম্পদ, সুযোগ ও সময়ের সমন্বয় ঘটানো যায়। সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনার সুফল হল-
১· সম্পদের মিতব্যয়িত
২· স্বল্প সময়ে ফললাভ
৩· স্বল্প সময়ে ও ব্যয়ে অধিক উৎপাদন
৪· শক্তি ও শ্রমের অপচয় রোধ
৫· উৎপাদনে গুণগতমান ও উৎকর্ষতা লাভ।
সাধারণ ব্যবস্থাপনাঃ
গাভী তার গুণগতমান উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়ে থাকে। কিন্তু গাভীর বংশানুক্রমিক গুণগতমান যতই ভাল হোক এর ব্যবস্থাপনা সমন্ধে বিশেষ যত্নবান হওয়া প্রয়োজন। দৈনন্দিন পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা রক্ষা, বিজ্ঞান সম্মত বাসস্থান, সুষম খাদ্য সরবরাহ, সঠিক প্রজনন, রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ইত্যাদি উন্নত গাভী পালনের মৌলিক বিষয়।
বাসস্থানঃ
পারিবারিক পর্যায়ে বা খামার পর্যায়ে গাভী পালন করতে হলে গাভীর জন্য ভাল বাসস্থান প্রয়োজন। গাভীকে বিভিন্ন প্রতিকূল অবস্থা যেমন- ঝড়, বৃষ্টি, অতিরিক্ত ঠাণ্ডা অথবা অতিরিক্ত গরম এবং অন্যান্য নৈসর্গিক দৈব দুর্বিপাক, পোকামাকড়, চোর, বন্য-জীবজন্তু হতে রক্ষা করার জন্য যথোপযুক্ত পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন বাসস্থান বা গোয়ালঘর প্রয়োজন। আমাদের আবহাওয়ার আলোকে ঘরে প্রচুর আলো বাতাস চলাচলের জন্য ঘরটি উত্তর-দক্ষিণমুখী হওয়া বাঞ্চনীয়। কোন অবস্থাতেই যেন ঘরে স্যাঁতস্যাঁতে অবস্থা যেন না থাকে। এতে ঘরের মেঝেটি ইট বিছানো থাকলে ভাল হয়। ঘরের দুর্গন্ধ ও মশামাছি দমনের জন্য মাঝে মাঝে জীবাণুনাশক দ্বারা ধোয়া প্রয়োজন।
গবাদিপশুর বাসস্থান দুই ধরণের হতে পারেঃ
১· উন্মুক্ত বা উদাম ঘর
২· বাঁধা ও প্রচলিত ঘর।
বাঁধা ঘরের বৈশিষ্ট্যঃ এই পদ্ধতিতে গরুর গলায় দড়ি বা লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে পালন করা যায়। গাভীর খাদ্য, পানি গ্রহণ এবং দুধ দোহন একই স্থানে করা যায়।
সুবিধাঃ বাঁধা থাকে বিধায় গাভীর দুধ দোহন সহজ হয়, প্রতিকূল আবহাওয়ায় পশু নিরাপদ থাকে, কৃত্রিম প্রজননের জন্য বেশ সুবিধাজনক, নির্ধারিত অল্প জায়গায় পশু পালন করা যায়।
অসুবিধাঃ এই পদ্ধতিতে ঘর তৈরি খরচ বেশি, পশুর সহজে ঘোরাফেরার ব্যবস্থা থাকে না, এতে পশুর গাভীর বিভিন্ন ধরনের রোগ হবার সম্ভাবনা থাকে, একই জায়গায় দিনরাত্রি বাঁধা থাকে বলে মেঝে স্যাঁতস্যাঁতে থাকে।
বাঁধা ঘরের নকশাঃ এই পদ্ধতির গো-শালায় পশু সব সময় বাঁধা অবস্থায় থাকে। এজন্য গো-শালা যাতে সহজে পরিস্কার করা যায় সেদিকে লক্ষ্য রেখে ঘর তৈরি করা প্রয়োজন। প্রচলিত গো-শালা দুই ধরনের হয়-
একসারি বিশিষ্ট গো-শালাঃ অল্প সংখ্যক গবাদি পশুর জন্য একটি লম্বা সারিতে বেঁধে পালনের জন্য এই গো-শালা তৈরি করা হয়। প্রতিটি পশুকে পৃথক রাখার জন্য জিআইপাইপ দিয়ে পার্টিশন দেয়া হয়, পার্টিশনের পাইপ লম্বায় ৯০ সে·মি· এবং উচ্চতায় ৪৫ সে·মি· হওয়া প্রয়োজন, একটি গরুর দাঁড়াবার স্থান ১৬৫ সে·মি·, পাশের জায়গা ১০৫ সে·মি·, খাবার পাত্র ৭৫ সে·মি· এবং নালা ৩০ সে·মি· হওয়া প্রয়োজন, একই মাপে পশুর সংখ্যা অনুযায়ী জায়গা নির্ধারণ করে গো-শালা তৈরি করা হয়, গো-শালা হবে একচালা বিশিষ্ট ঘর, ঘরের ছাদ প্রায় ৩০০ সে·মি· উঁচুতে করতে হয়।
দুই সারি বিশিষ্ট গো-শালাঃ অল্প জায়গায় অধিক পশুপালনের জন্য এ ধরণের গো-শালা তৈরি করা হয়, এ ধরনের গো-শালায় পশুকে দুভাবে রাখা যায়, মুখোমুখি পদ্ধতি ও বাহির মুখ পদ্ধতি। মুখোমুখি পদ্ধতিতে দুই সারি পশু সামনাসামনি থাকে। দুইসারি খাবারের পাত্রের মাঝখানে ১২০ সে·মি· চওড়া রাস্তôা থাকে- যা পাত্রে খাবার দেবার জন্য ব্যবহার করা হয়, একটি গরুর জন্য দাঁড়ানোর জায়গা ৫·৫ ফুট, পাশের জায়গা ৩·৫ ফুট।
সুবিধাঃ একই সাথে দুইসারি পশুকে সহজে খাবার ও পানি সরবরাহ করা যায়, দুধ দোহনের জন্য অধিকতর আলো পাওয়া যায়, পশু নিজ জায়গায় স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে, পরিচর্যাকারী সহজে চলাফেরা করতে পারে।
গাভীর খাদ্য সরবরাহ -
কাঁচা ঘাস (পরিস্কার স্থান থেকে সংগ্রহ করা সবুজ ঘাস) ২০-৩০ কেজি, দানাদার খাদ্য মিশ্রণঃ ১৮-২০% প্রোটিন সমৃদ্ধঃ ১ম ৩ কেজি দুধ উৎপাদনের জন্য- ০৩ কেজি, পরবর্তী প্রতি কেজি দুধ উৎপাদনের জন্য-০·৫ কেজি, লবণ-৫০-৬০ গ্রাম, পরিস্কার পানি-প্রয়োজন মত।
পরিচর্যাঃ
গাভীর সঠিক পরিচর্যা না করলে অস্ট্রেলিয়া বা নিউজিল্যান্ডের উন্নত জাতের গাভী পালন করেও গাভীকে সুস্থ সবল রোগমুক্ত উৎপাদনক্ষম রাখা সম্ভব হবে না। ফলে গাভী হতে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ দুধ, গোশত পাওয়া যাবে না এবং গাভী পালন অলাভজনক হবে। গাভী মারা যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকবে। এজন্য একজন খামারীকে আমি প্রথমেই পরামর্শ দিবে যে লক্ষ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে গাভীর খামার করার আগে কমপক্ষে ৬/৮ মাস অবশ্যই কোন একটি গাভীর খামারের সাথে লেগে থাকতে হবে। অন্যথায় খামার শুরু করে এক বছর পরে খামারীকে অবশ্যই অবশ্যই লস গুনতে হবে।
দুধ দোহনঃ
গাভীর দুধ দৈনিক ভোরে একবার এবং বিকালে একবার নির্দিষ্ট সময়ে দোহন করতে হবে। দুধ দোহনের পূর্বে গাভীর উলান ও দোহনকারীর হাত পরিস্কার ডেটল মিশ্রিত পানি দিয়ে ভালভাবে ধুয়ে নিতে হবে।
প্রজননঃ
গাভীর বংশানুক্রমিক গুণগতমান উন্নয়নের জন্য সুষ্ঠু পরিকল্পিত প্রজনন ব্যবস্থা অবলম্বন করতে হবে। যে ষাড়ের মা, দাদী, নানী যত বেশি পরিমাণ দুধ দেয় তার বাচ্চার দুধ উৎপাদনের ক্ষমতা ততই বেশি হয়। তাই যখন গাভী ষাড়ের সাথে মিশতে চাবে, তখন গুণগতমানসম্পন্ন ষাড়ের বীজ দ্বারা নিকটস্থ কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র হতে গাভীকে প্রজনন করিয়ে নেওয়া প্রয়োজন।
খামারের রেকর্ড সংরক্ষণঃ
খামারের লাভক্ষতি নিরূপণ আয়-ব্যয়ের সঠিক হিসাবের উপর নির্ভরশীল। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য পরিকল্পনা ও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিয়য়ে মূল্যায়ন করা দরকার। খামারের উৎপাদিত পণ্যের হিসাব, ক্রয়, বিক্রয়, জন্ম, মৃত্যু এবং কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রমের জন্য সঠিক তথ্য রক্ষাকল্পে রেকর্ড সংরক্ষণ করা অত্যাবশ্যকীয়। এটি একটি খামারের অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
উন্মুক্ত বাসস্থানে নিম্নোক্ত হারে জায়গার প্রয়োজনঃ
পশুর ধরণ ঘরে প্রতি পশু স্থান প্রতি পশুর জন্য মুক্ত স্থান খাদ্যপাত্র
বাড়ন্ত বাছুর ২·৫-৩ বর্গ মিটার ৫-৬ বর্গ মিটার ৩৭-৫০ সেন্টিমিটার
গাভী ৩-৩·৫ বর্গ মিটার ৮-১০ বর্গ মিটার ৫০-৬০ সেন্টিমিটার
গর্ভবতী গাভী ১০-১২ বর্গ মিটার ১৮-২০ বর্গ মিটার ৬০-৭০ সেন্টিমিটার।
আমি দেশ ও দেশের মানুষকে ভালবাসি। এই ভালবাসার মানসিকতা নিয়েই প্রতিষ্ঠা করেছি এম.আর.আর. ফাউন্ডেশন। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি; বেকার যুবকরা বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষিত হয়ে নিজেই নিজের বেকারত্বের সমাধান করতে পারেন। বিশেষ প্রয়োজনে আমাকে ০১৯১১৭৬৬৪৬৩ নাম্বারে পাবেন।