প্রশ্ন ০১: আমি বিদেশে থাকি। কিছু টাকা জমিয়েছি, দেশে এসে ফার্ম করতে চাই। ফার্ম করে কি সংসার খরচ চালাতে পারবো?
উত্তর: ধরে নিলাম আপনি ৩০ লাখ টাকা জমিয়েছেন। প্রথেমেই বলবো, না আপনি পারবেন না সংসার খরচ চালাতে। কারন আমি চাইনা আপনি এই টাকার পুরোটা এই খাতে বিনিয়োগ করেন এখন। দেশে আসার আগেই আপনি ছোট করে ৫ লাখ টাকা দিয়ে শুরু করতে পারেন। দেশে আপনার পরিবারের পক্ষ থেকে যদি কেউ থাকে তারা দেখাশুনা করবে। এই ক্ষেত্রে খুব কম খরচে একটা গোয়াল ঘর সাথে ২ টা ১২-১৪ লিটার দুধের গরু বাছুর সহ এবং ৩-৪ টা ছোট দেশী ষাড় বাছুর কিনতে পারেন। ঘাস চাষ অবশ্যই করতে হবে খরচ কমিয়ে আনার জন্য। দুধের গরুগুলো ৭-৮ মাস দুধ দেবে, এটা দিয়ে সব গরুর খাবার খরচ, এবং ১ জন কর্মচারীর বেতন হয়ে গিয়ে যা থাকবে তা জমিয়ে রাখবেন। ডেইরী ব্যবসা লাভবান তখনই হবে যদি আপনার গরুগুলো প্রতি বছর বাচ্চা দেয় এবং খরচ কমিয়ে আনতে পারেন। এটাই মূল মন্ত্র। আপনার গরু ২ টি দুধ দেয়া বন্ধ করে দিলে ৪-৫ মাস ড্রাই সময়টা জমানো টাকা খরচ করবেন বা ১-২ টা ষাড় বিক্রি করে দিলেন, পাশাপাশি দানাদার খাবার কমিয়ে ঘাস খর খাইয়ে খরচ কমানোর চেস্টা করবেন।এই সময়টা চালিয়ে নিয়ে যাওয়াটাই কঠিন। ৪-৫ মাস পরে আবার বাচ্চা দিলে আবার দুধ বিক্রি করে আগের অবস্থায় চলে আসতে পারবেন।
এই ক্ষেত্রে ষাড় বাছুর গুলো না কিনে আপনি শুধু মাত্র ২ টা দুধের গরু দিয়েও শুরু করতে পারেন। এগুলোর দুধ দেয়া বন্ধ হয়ে গেলে আবার ২ টা কিনবেন। এভাবে একটা সাইকেল করে নিলে দুধের টাকা দিয়েই খাবার খরচ মিটিয়ে হয়তো কিছু টাকা হাতে থাকতে পারে। দুধের দাম কত, কোথায় কিভাবে বিক্রি করবেন তা আগে থেকে জেনে বুঝে ডেইরী শুরু করবেন।
এভাবে কমপক্ষে ৩-৪ বছর যাবার পর একটা ভাল অবস্থানে যখন চলে আসবে, তখনই আপনি দেশে চলে আসতে পারবেন।পয়সা যেহেতু খরচ করে গিয়েছেনই, টাকাটা তো তুলতে হবে। এই ব্যবসা না বুঝে আগেই দেশে চলে আসবেন না প্লিজ। তবে যে টাকা খরচ করে মানুষ বিদেশ যায়, সেই টাকা দিয়ে দেশে অনেক বেশী ভালো কিছু করা যেতো।
এই ক্ষেত্রে ষাড় বাছুর গুলো না কিনে আপনি শুধু মাত্র ২ টা দুধের গরু দিয়েও শুরু করতে পারেন। এগুলোর দুধ দেয়া বন্ধ হয়ে গেলে আবার ২ টা কিনবেন। এভাবে একটা সাইকেল করে নিলে দুধের টাকা দিয়েই খাবার খরচ মিটিয়ে হয়তো কিছু টাকা হাতে থাকতে পারে। দুধের দাম কত, কোথায় কিভাবে বিক্রি করবেন তা আগে থেকে জেনে বুঝে ডেইরী শুরু করবেন।
এভাবে কমপক্ষে ৩-৪ বছর যাবার পর একটা ভাল অবস্থানে যখন চলে আসবে, তখনই আপনি দেশে চলে আসতে পারবেন।পয়সা যেহেতু খরচ করে গিয়েছেনই, টাকাটা তো তুলতে হবে। এই ব্যবসা না বুঝে আগেই দেশে চলে আসবেন না প্লিজ। তবে যে টাকা খরচ করে মানুষ বিদেশ যায়, সেই টাকা দিয়ে দেশে অনেক বেশী ভালো কিছু করা যেতো।
♣প্রশ্ন ০২: আমি কি ডেইরী শুরু করবো নাকি ফ্যাটেনিং?
উত্তর: কোনটা শুরু করবেন তা নির্ভর করবে আপনার আর্থিক, পারিপার্শ্বিক এবং অবস্থানগত সুযোগ সুবিধার কথা বিবেচনা করে। আপনার এরিয়াতে যদি দুধের দাম ভালো থাকে, আপনি যদি ভালো দুধের গরু জোগাড় করতে পারেন, ডাক্তার বা পশু হাসপাতাল কাছেই থাকে আপনি ডেইরী করতে পারেন। তবে ফার্ম শুরু করা যতনা কঠিন তার থেকে বেশী কঠিন এর ব্যবস্থাপনা কৌশল। ফ্যটেনিং এর ক্ষেত্রে যদি শুধু কোরবানীকে লক্ষ্য রেখে আগান তাহলেও ঝুঁকি আছে। কারন কোরাবানীর বাজার নিয়ন্ত্রন করে ভারতের গরুর যোগান। আপনি আমি এই ঈদের বাজারে গরুর দাম কোনভাবেই নির্ধারন করতে পারবোনা। তাই যদি ১২ মাস ধরে বিক্রি চালিয়ে যেতে পারেন ফ্যাটেনিং এ ঝুঁকি অনেক কমে যাবে।
♣ প্রশ্ন ০৩: ডেইরী ফার্মের সফলতার মূল দিক কি কি?
♣ প্রশ্ন ০৩: ডেইরী ফার্মের সফলতার মূল দিক কি কি?
উত্তর: ৪ টা দিক সব থেকে গুরুত্তপূর্ন: ১) গরুকে প্রতি বছর বাচ্চা দিতে হবে। ২) ফার্মের খাবার খরচ কমিয়ে আনতে হবে ৩) নিজের উপস্থিতি ৪) সঠিক ব্যবস্থাপনা
গরু যদি ৫ লিটার দুধও দেয়, কিন্তু প্রতি বছর বাচ্চা দেয় তাহলে ফার্ম লাভবান হবে। পাশাপাশি খরচের লাগাম কঠিনভাবে ধরে রাখতে হবে। এজন্য ঘাস চাষ করতে হবে, সাইলেজ করতে হবে। আর নিজের উপস্থিতি, এর কোন বিকল্প নেই।
♣ প্রশ্ন ০৪: গরু হিটে আসার পর কয়েকবার সিমেন বা বীজ দেয়া হয়েছে, বীজ রাখছেনা!! কি করা যায়?
গরু যদি ৫ লিটার দুধও দেয়, কিন্তু প্রতি বছর বাচ্চা দেয় তাহলে ফার্ম লাভবান হবে। পাশাপাশি খরচের লাগাম কঠিনভাবে ধরে রাখতে হবে। এজন্য ঘাস চাষ করতে হবে, সাইলেজ করতে হবে। আর নিজের উপস্থিতি, এর কোন বিকল্প নেই।
♣ প্রশ্ন ০৪: গরু হিটে আসার পর কয়েকবার সিমেন বা বীজ দেয়া হয়েছে, বীজ রাখছেনা!! কি করা যায়?
উত্তর: হয়তো যে এ আই কর্মী সিমেন পুশ করছে তিনি এক্সপার্ট নয়, হয়তো যে সিমেন যে টেম্পারেচার এ রাখার কথা তা রাখা হয়নি, নস্ট হয়ে গেছে, অথবা আপনি সঠিক তথ্য দিতে পারেননি এ আই কর্মীকে। এই রকম নানাবিধ সমস্যায় পড়ে এভাবে বার বার সময় নস্ট না করে ভাল জাতের ষাড় দিয়ে পাল দিতে হবে। ফার্মে একটা ভালো জাতের ফ্রিজিয়ান বা শাহীওয়াল ষাড় রাখা এজন্যই খুব জরুরী। গরু প্রতি বছর বাচ্চা না দিলে ফার্ম লোকসান হবেই। অত্যন্ত জরুরী এটা।
♣প্রশ্ন ০৫: ডেইরী এবং ফ্যাটেনিং এর জন্য কোন জাতের গরু ভালো হবে?
♣প্রশ্ন ০৫: ডেইরী এবং ফ্যাটেনিং এর জন্য কোন জাতের গরু ভালো হবে?
উত্তর: ডেইরীর জন্য আমি ফ্রিজিয়ান জাতকে পছন্দ করি। আমাদের দেশে এই জাতটার রেকর্ড ভালো, যদিও ইনব্রিড হতে হতে প্রায় ধংসের পথে। এই মন্দের মধ্যে এটাই ভালো। ফ্যাটেনিং এর জন্য ফ্রিজিয়ান(F), শাহীওয়াল (S) অথবা এই ২ টার ক্রস SxF থেকে যে ষাড় বাচ্চাটা আসে এটাও অসাধারন। আমার মতে SxF এর ষাড়, আমেরিকান ব্রাহমা থেকে কোন অংশে কম নয়। আর এই ক্রস থেকে যে বকনা বা মেয়ে বাচ্চা হবে তাও দুধের জন্য খারাপ হবেনা। এছাড়া আমাদের দেশের নিজস্ব জাত পাবনা ব্রিড এবং রেড চিটাগং ও বেশ ভালো।
♣প্রশ্ন ০৬: আমার এলাকায় ঘাস নাই। কি করে খরচ কমাবো?
♣প্রশ্ন ০৬: আমার এলাকায় ঘাস নাই। কি করে খরচ কমাবো?
উত্তর: যাদের এলাকায় ঘাস নেই তারা হাইড্রোফনিক করতে পারেন। নেটে অনেক ভিডিও আছে, অনেকের লেখা আছে ফেসবুকে কিভাবে করতে হয় শিখে নেবেন। খুব সহজ। আর যাদের ৩- ৬ মাস পানি থাকে জমিতে এজন্য ঘাস করতে পারেন না তারা সাইলেজ করতে পারেন এই খারাপ সময়কে ব্যাক আপ দেবার জন্য। সাইলেজ কি করে করবেন আমার ফেসবুকে লেখা আছে। আগে অল্প করে দেখেন কেমন হয়।
♣প্রশ্ন ০৭: দেশী গরুকে বিদেশী সিমেন দিলে কি ভালো ফল পাওয়া যাবে?
♣প্রশ্ন ০৭: দেশী গরুকে বিদেশী সিমেন দিলে কি ভালো ফল পাওয়া যাবে?
উত্তর: দেশী গরুকে ৫০-৭৫% এর সিমেন দিতে পারেন। এতে খুব ভালো বাচ্চা আসবে, দুধ ও অনেক ভালো আসবে। এরপর যে বাচ্চা আসবে ওটাকে আবার ৭৫% সিমেন দিবেন। এভাবে জাত উন্নয়ন করে নিলে আপনি সব থেকে ভালো দুধের গরু পাবেন। কিন্তু সমস্যা হলো আমাদের দেশী গরু কি এখন পাওয়া যায়!!! এটা সংরক্ষন করাই এখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ ।
♣প্রশ্ন ০৮: আমি চাকুরী করছি ঢাকায়। আমার অনেকদিনের শখ একটা ফার্ম করার। আমি কিভাবে আগাবো?
♣প্রশ্ন ০৮: আমি চাকুরী করছি ঢাকায়। আমার অনেকদিনের শখ একটা ফার্ম করার। আমি কিভাবে আগাবো?
উত্তর: যদি নিজের কাছের লোক থাকে যারা আপনাকে ঠকাবেনা, মিথ্যা বলবেনা তাহলে শুরু করতে পারেন ছোট পরিসরে নিজের বাড়ীতে। এখান থেকে আয় করে আপনি চলবেন এভাবে চিন্তা না করাই ভালো প্রথম অবস্থায়। ধরেই নেবেন ৩ বছর কিছু আসবেনা। শুধু সম্পদ বাড়বে। কৌশলগত ভাবে আগালে ৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করলে এখনই কিছু মুনাফা আসবে (প্রশ্ন ০১ দেখেন)। আর মোটামুটি ৩৪-৪০ লাখ টাকা হাতে নিয়ে নামলে প্রথম থেকেই বেশ ভাল লাভ বা মুনাফা করতে পারবেন। সবকিছু কৌশলগত ব্যাপার। সকল সমস্যা ছোট ব্যবসায়ীদের যাদের মুলধন কম, তাই অপেক্ষা তাদের একটু বেশী করতে হবে।
♣প্রশ্ন ০৯: ভালো দুধের গরু কোথায় পাবো? সবাই ঠকায়, বলে একটা দুধ হয় আরেকটা। কি করে ভালো দুধের গরু চিনতে পারবো?
♣প্রশ্ন ০৯: ভালো দুধের গরু কোথায় পাবো? সবাই ঠকায়, বলে একটা দুধ হয় আরেকটা। কি করে ভালো দুধের গরু চিনতে পারবো?
উত্তর: হ্যা, অনেকেই মিথ্যা বলে ঠকিয়ে দিচ্ছে। আমার পরামর্শ, গরু না চিনলে গাভীন গরু প্রথম অবস্থায় কিনবেন না। নানা ভাবে আপনাকে বিক্রেতা বুঝাবে। আপনি তখনই কিনবেন যখন গরু দেখলেই বুঝে যাবেন কেমন হতে পারে। এই গাভীন গরু কেনা জুয়া খেলার মত অবস্থা। দুধের গরু কেনাতেও অনেক ধোকাবাজী আছে। দুধের গরু কেনার আগের দিন বিকাল বেলা দুধ দোয়ানোর সময় সামনে থেকে দেখবেন কতটুকু দুধ পেলেন। পরেরদিন সকাল বেলা যাবেন আবার দুধ দোয়াতে। এভাবে প্রথম বিকাল পরে সকাল….. ঠিক এই নিয়মে গিয়ে দুধ চেক করে দেখলে আপনাকে ঠকাতে পারবে না। আপনি যদি আগে সকালে এরপর বিকালে যান….. তাহলেই ধরা খাবেন। কি করে শুনুন। যেদিন সকালে যাবেন তা যদি আগের দিন বিক্রেতা জানে সে আগেরদিন বিকালে দুধ কম দোয়াবে আপনাকে পরেরদিন বেশী দুধ দেখানোর জন্য। আপনি তো সকাল বেলা গিয়ে দেখবেন দুধ পেয়েছি সকালেই ১৮ কেজি, বিকালে ৬ কেজি। এরপর আপনি ২.৫০ লাখ টাকা দিয়ে কিনে আনবেন। বাসায় এসে দেখবেন সকালে হচ্ছে ১১ কেজি এবং বিকালে ৬ কেজি। মানে ঠকে গেছেন আপনি, প্রায় ৮০ হাজার টাকা বেশী দিয়ে গরু কিনে এনেছেন। আশাকরি বোঝাতে পেরেছি।
No comments:
Post a Comment